Bangla
"There are no unmixed blessings on Earth."
“আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স” - যারা প্রযুক্তি নিয়ে সচেতন, বর্তমানে তাদের প্রাত্যহিক জীবনের সবচেয়ে বেশিবার শোনা একটি শব্দ। অন্যান্য সব জায়গার মত এই এআই এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রেও। ওইদিন আমার এক ছাত্রকে একটা ইউনিক টপিকে প্যারাগ্রাফ লিখতে দিলাম। আর এই ব্যাটায় সেটা হুবুহু চ্যাটজিপিটি থেকে ছাপায় দিল! এমতাবস্থায় শিক্ষাব্যবস্থায় এআই এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদ আলোচনা প্রয়োজন।
তো তাইলে চলেন, আলোচনা শুরু করা যাক। এইখানে যে বিষয় বলে দেওয়া দরকার, এইরকম সংবেদনশীল একটা আলোচনা নিরপেক্ষ হওয়া দরকার। তাই আমি বাদী আর বিবাদী উভয়পক্ষের হয়েই কথা বলবো আরকি। আর আসলে আমি শুধুমাত্র বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব নিয়ে না, পুরো বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো।
মূল আলোচনার আগে যে বিষয়টা ক্লিয়ার থাকা দরকার সেটা হচ্ছে আর্টফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি? আপনার যদি এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকে, তাহলে আপনি পরের প্যারাতে চলে যেতে পারেন সরাসরি। ধরেন আপনি একটা টেক্সট ফাইল বানালেন সেখানে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা লেখা আছে। সেই ফাইলের নাম দিলেন "Numbers" এবং একটা প্রোগ্রাম বানালেন এবং সেই প্রোগ্রামের জন্য ডাটাবেইজ হিসেবে "Number" ফাইলটা সিলেক্ট করে দিলেন। এখন ইউজার থেকে ইনপুট নিয়ে সেই ইনপুট থেকে তথ্য দিতে পারে। মানে কোন ইউজার যদি "৫" সংখ্যাটিকে ইনপুট দিয়ে তার পরের সংখ্যা জিজ্ঞেস করে, তাহলে সাথে সাথেই আপনার প্রোগ্রাম ইউজারকে "৬" আউটপুট দিবে। এখন এই ধরণের প্রোগ্রামগুলোকে চ্যাটবট বলে। কারণ এরা চ্যাট করে করে উত্তর দেয়।(যাদের বিজনেস পেইজ আছে এবং সেই পেইজে অটো রিপ্লাই সেট করা আছে, তারা আশা করি বুঝবেন) এখন এই চ্যাটবটের কিছু সমস্যা আছে। প্রথমত এরা যদি ভুল উত্তর দেয় কোনো কারণে, এবং ইউজার যদি উত্তরটা ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে সঠিক উত্তরটি জানিয়ে দেয়, তাহলে সেই চ্যাটবট সেটা মেনে নিবে না এবং ভুলটাই সঠিক বলে চালিয়ে দেবে। অন্যদিকে, সে কোনোভাবেই প্যাটার্ন বুঝতে পারবে না। মানে, কেউ যদি তাকে বলে, "১, ৩, ৫, ৭, ৯। এর পরের সংখ্যা কত?" সে উত্তর দিবে। ১০। ১১ না। তো এবার আপনি আপনার সেই প্রোগ্রামটিকে এমনভাবে ইডিট করলেন যেন সে নিজের ভুল থেকে শিখতে পারে এবং নিজের ডাটাবেইজ ব্যবহার করে প্যাটার্ন বুঝে ডাটাবেইসের সীমার মধ্যেই নতুন তথ্য জেনেরেট করতে পারে। তখন সেটা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি। এটাই হচ্ছে মোটা দাগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটা ব্যাখ্যা।
এখন আসে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্ষাতে কি ধরণের প্রভাব রাখবে?
প্রথমেই যে ইতিবাচক প্রভাবগুলো ধীরে ধীরে দেখা যাবে:
শিক্ষার্থীদের জন্য একটা ভালো শিক্ষক: চ্যাটজিপিটির মত ফ্রি এআই, যে প্রায় সব বিষয়েই অভিজ্ঞ, ২৪/৭ অনলাইনে থাকে এবং কখনো বিরক্ত হয় না, তার মত ভালো একজন পার্সোনাল শিক্ষক হতেই পারে না। এর সাহায্যে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রশ্ন ও সমস্যা নিজেরাই ছোট পরিসরে মিটিয়ে নিতে পারবে প্রায় বিনামূল্যেই। এর ফলে যারা ভবিষ্যতে শিক্ষক হবেন, তাদের খুবই দক্ষ হতে হবে।
পার্সোনাল কোচ: এই ধরণের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুলকে কোচের মত ব্যবহার করে শিক্ষার্থী তাদের গ্রামারের মত কঠিন জিনিসের দক্ষতা খুব সহজেই বাড়িয়ে নিতে পারবে।
লেসন প্ল্যান: শিক্ষকরাও এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাহায্যে নিজেদের লেসন প্ল্যান, হোমওয়ার্ক এইসবের একটা পারফেক্ট আউটলাইন সেট করতে পারেন। যা দিন শেষে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ বড় একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ডাটা এনালাইসিস: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাহায্যে প্রত্যেক ছাত্রের পড়াশুনার একটা খুবই ডিটেইলড ডাটা এনালাইসিস পাওয়া যেতে পারে, যেটা শিক্ষার্থীদের কি কি বিষয়ে আরো জোর দেওয়া প্রয়োজন, কীভাবে সে বিষয়ে নিজে ভালো হবে সেই তথ্য যেমন দেবে, তেমনি শিক্ষার্থীকে তার ভালো ভালো ফলাফলের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে।
এছাড়াও আরো অনেক বিষয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দুইজনের অনেক কাজ কমিয়ে এবং প্রত্যেক বিষয়ে ভালো সহযোগিতা করে শিক্ষাক্ষেত্রে একটা বেশ বড় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিক যে নেতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে:
কপি-পেস্ট: বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যেখানে অনলাইনে কিংবা কম্পিউটার এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হয় কিংবা এসাইনমেন্টের মত টাস্ক দেওয়া হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা চ্যাটজিপিটির সাহায্যে সেইসব লেখা কপি-পেস্ট করে সাবমিট করে দিচ্ছে। যার ফলে সেইসব স্কুল-কলেজ কাগজ-কলমের যুগে ফিরে যাচ্ছে।
ভুল তথ্য: এইসব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল খুব কনফিডেন্টের সাহায্যে ভুল উত্তর দেয় যা খুবই মারাত্মক এবং বড় ধরণের একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে। কারণ এই ধরণের টুলগুলো সাধারণত ডাটাবেইস থেকে সরাসরি তথ্য প্রদান করে না।
এই ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ধরণের প্রভাব রাখতে পারে তার উপর আলোচনা। এখন শেষে একটা মতামত দেওয়া দরকার আসলে এটা কি ভবিষ্যৎ এ আশীর্বাদ হবে নাকি অভিশাপ। এই বিষয়ে আমি আমার একটা নিজস্ব মতামত দিতে চাই। প্রথম যখন ক্যালকুলেটর আবিষ্কার হয়, তখন গণিতের শিক্ষকদের আন্দোলন করতে দেখা যায় এর বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা বর্তমান সময়ে বসে দেখতে পাই, ক্যালকুলেটর এর আবিষ্কার মানবজাতির জন্য কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। পৃথিবীতে প্রত্যেক বিষয়েরই ভালো-খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। তাই আমরা যদি, খারাপ দিকগুলোকে মোকাবিলা করে ভালো দিকগুলো যথাযথভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করি, তাহলে আমার মতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুবই ভালো এবং বেশ বড় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন রাখবে শিক্ষাক্ষেত্রে। আমার মতামতের বিরুদ্ধে আপনার ভিন্নমত থাকতেই পারে। সেই মত সানন্দে গৃহীত। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Bদায়
কলমে: তারুণ্য
