আপনার ভাষায় NFT

আপনার ভাষায় NFT

Bangla

আপনার ভাষায় NFT
আপনার ভাষায় NFT
আপনার ভাষায় NFT

তো সেইদিন আমি বেশ আরামদায়ক ভুড়িভোজের পর বেশ আরামে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতেসিলাম। অবশ্য আমি সারাটা দিনই এরকম করেই কাটাই। তো যাই হোক, আচমকা ফ্ল্যাশ লাইটের ঝলকানিতে একটু চমক খেলাম। খাওয়াটাই স্বাভাবিক। মাথা তুলে দেখি আমার সামনে সখিনা মোবাইল নিয়ে দাঁড়াই আছে।


আমি:- কি ব্যাপার?

সখিনা:- কি ব্যাপার?

আমি:- আরে আজব! আমিও তো সেটাই জিজ্ঞেস করতেসি! ব্যাপারটা কি?

সখিনা:- ওহ! ব্যাপার কিছু না। জাস্ট তোমার ছবি তুললাম একটা।

আমি:- কেন?

সখিনা:- আরে, এখন ইউটিউবে দেখলাম কে একজন নাকি বান্দরের ছবি বেঁচে মিলিয়ন ডলার কামাই নিসে!

আমি:- বান্দরের ছবি????


সখিনার মোবাইল থেকে সেই বান্দরের ছবি দেখে বুঝলাম আসলে সেটা ১.৩ মিলিয়ন ডলারে সেল হওয়া Bored Ape NFT.


আমি:- হ্যাঁ, তো কি হয়ছে

সখিনা:- না মানে সে যদি শুধু ১টা বান্দরের ছবি বেঁচে এতো টাকা কামাতে পারে, আমি ১টা বেঁচে কমপক্ষে কি লাখ খানেক টাকা কামাতে পারবো না? 

আমি:- পারতে পারো। তোহ!!?!

সখিনা:- এজন্যই তো তোমার ছবি তুললাম। যাতে বেঁচতে পারি!

আমি:- এ্যাহঁ!!


অত্যন্ত অপমানজনক! কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, "এক মাঘে শীত যায় না।" তাই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 


আমি:- তুমি কি জানো এইগুলোকে কি বলে? বা কোথায় বেঁচে? বা কিভাবে প্রমোট করে?


এইবার সখিনার টনক নড়ল! সে প্রথমে আমাকে বলার জন্য অনেক কাকুতিমিনতি করল। কিন্তু শুকনো কথায় চিড়ে তো ভিজবে না। এবার সে সরাসরি, আমার ভাত বন্ধের হুমকি দিল! বেশ ভয়ানক ব্যাপার! তাই আমি শেষ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলাম!


আমি:- এই যে তুমি যে বান্দরের ছবি দেখাইসো ওইটার নাম হচ্ছে NFT। এই NFT টার নাম Bored Ape। এগুলো হচ্ছে এমন Digital Assets যেগুলো মার্কেটপ্লেসে Crypto এর বিনিময়ে আদান-প্রদান হয়।

সখিনা:- আমি কিচ্ছু বুঝি নাই।

আমি:- আচ্ছা, প্রথমেই আসি NFT এর পূর্ণরূপ নিয়ে। NFT এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Non Fungible Token. NFT নিয়ে বুঝতে হলে প্রথমে এই প্রত্যেকটা অংশকে বুঝতে হবে।

সখিনা:- আচ্ছা!

আমি:- তো প্রথমেই আসি, Non-Fungible অংশে। এর অর্থ সহজ বাংলায় করলে অপ্রতিস্থাপনযোগ্য। বিষয়টা বুঝাই। ধর, তোমার কাছে একটা ১০০টাকার নোট আছে। এই নোটটা আমি তোমার থেকে নিলাম।

সখিনা:- কেন? নিবা কেন? আর নিলেই কি আমি তোমাকে দিবো নাকি? হুহ

আমি:- আরে আজব! উদাহরণ দিচ্ছি!

সখিনা:- ও আচ্ছা! কন্টুনি কর, কন্টুনি।

আমি:- তো ওই ১০০ টাকাটা নিয়ে আমি তোমাকে দুইটা ৫০ টাকার নোট দিতে পারি। আবার ৫টা ২০টাকার নোট দিতে পারি। আবার ১০টা ১০টাকার নোটও দিতে পারি। সবগুলোর মূল্যই কিন্তু সেইম। ১০০টাকা।

সখিনা:- হ্যাঁ

আমি:- তাহলে, এই ১০০ টাকা'টাকে দুইটা ৫০ টাকার নোট বা ৫টা ২০টাকার নোট বা ১০টা ১০টাকার নোট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়। মানে এই ১০০টাকার নোটটা Fungible বা প্রতিস্থাপনযোগ্য। এখন আবার ধর…..

সখিনা:- কাকে?

আমি:- কল্পনা কর, তোমার কাছে শার্লক হোমস সিরিজের একদম প্রথম বইটার প্রথম এডিশনের একদম প্রথম কপিটা আছে।

সখিনা:- আছে নাকি? নাই তো!!

আমি:- "কল্পনা" করতে বলসি।

সখিনা:- ও আচ্ছা!

আমি:- এখন, গতকালকে আমি সেইম বইটা কিনে আনসি। এখন আমারটা হচ্ছে সর্বশেষ এডিশনের একটা কপি। এখন আমি যদি আমার বইটার সাথে তোমার বইটা অদল-বদল করতে চাই, তাহলে কি হবে? হবে না! কারণ, এই জিনিসটার একটা অ্যান্টিক ভ্যলু আছে। তাই এই বইটা হচ্ছে অপ্রতিস্থাপনযোগ্য বা Non-Fungible।

সখিনা:- হুম। বুঝিলাম!

আমি:- ঠিক এমনইভাবে, এই NFT গুলোকেও কোনকিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। তাই এর নামের প্রথম অংশ Non-Fungible.

সখিনা:- তাইলে Token মানে কি?

আমি:- এই Token বিষয়টা হচ্ছে ব্লকচেইনের একটা বিষয়। যেহেতু এইসব কিছুই Web3 এর উপর বেইসড। তাই এই জিনিসটা বুঝতে হলে ব্লকচেইনের ব্যাসিক জানা লাগবে। তাও একটু সংক্ষেপে বুঝানোর চেষ্টা করি।

সখিনা:- না, ডিটেইলসে বুঝাও!

আমি:- Token মানে সিম্পল ভাষায় কোন ডিজিটাল এসেট বা সম্পদের উপর এমন একটা রুল এসাইন করা, যাতে পরবর্তীতে যে কেউ ওই এসেটের অতীত ইতিহাসটা বুঝতে পারে!

সখিনা:- এ্যাঁহ!!!!

আমি:- সিম্পল ভাষায় বুঝায়! ধর, আমি একটা বই কিনলাম "সেবা প্রকাশনী"র থেকে, আর আমি পড়া শেষে সেটা মফিজের কাছে বেঁচে দিলাম। এখন মফিজ আর আমি ব্যতীত আসলে তেমন কেউ জানবেই না যে এই বই এর অতীত মালিক ছিলাম আমি। এখন ধর, আমি এই বই কেনা এবং বেচার সময় একটা দলিল করলাম। দলিলে লেখা আছে, ১/১/২০২৩ তারিখে দুপুর ১২টা ৩ মিনিটে ১২৩টাকার বিনিময়ে সেবা প্রকাশনীর থেকে কিনলাম। সাথে আমার আর সেবা প্রকাশনীর সাইন। ২/২/২৩ তারিখে দুপুর ২টা ২ মিনিটে আমি ১৫০টাকার বিনিময়ে আমি সেটা মফিজের কাছে বেঁচে দিলাম। সাথে আমার আর মফিজের সাইন।

সখিনা:- সাথে আমার সাইন থাকবে না?

আমি:- কেন? 

সখিনা:- এমনেই! হুদাই! খুশির ঠেলায়!

আমি:- আর ধুরু! যা বুঝায় সেটা বুঝো। এই যে, সম্পূর্ণ দলিল-দস্তাবেজের বিষয়টা, এটাকে যদি ব্লকচেইনের টেকনোলজির সাহায্যে ডিজিটালি নিয়ে আসি, সেটাকে ব্লকচেইনের ভাষায় বলে, Token। 

সখিনা:- তাহলে শেষ পর্যন্ত NFT এর সংজ্ঞা কি দাঁড়াল?

আমি:- যদি নিজের মত করে বলি, NFT হলো ব্লকচেইন টেকনোলজির সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত এমন ডিজিটাল এসেট যা অপ্রতিস্থাপনযোগ্য এবং যার মার্কেট ভ্যলু রয়েছে।

সখিনা:- এ্যাঁহ!!?!?!

আমি:- এতোক্ষণ যেটা বুঝাইসি সেটা বুঝচ্ছো?

সখিনা:- হ্যাঁ!

আমি:- তাহলেই হয়সে!

সখিনা:- আচ্ছা এই যে বার বার বলতোসো ডিজিটাল এসেট, এর মানে কি ছবি?

আমি:- ছবি, ভিডিও, অডিও, ফাইল এরকম ডিজিটাল যেকোন কিছুকেই ডিজিটাল এসেট বলে। যেমন: NBA একটা NFT সেল করসে যেটা ছিল LeBron James এর বিখ্যাত Dunk এর ছবি। আবার, Jack Dorsey টুইটারে করা প্রথম টুইট, যেটা তার নিজের ছিল, সেটাকে NFT বানায় সেল করসে। 

সখিনা:- আচ্ছা একটা জিনিস, এই যে ধর, যেই NFT গুলো মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হচ্ছে, সেইগুলো মানে সেই ছবিটা তো আমি ডাউনলোড করে আমার মোবাইল/কম্পিউটারে সেইভ করে ফেলতে পারতেসি। তাহলে যে কিনতেসে সে আসলে লস দিচ্ছে না?

আমি:- না, এইখানে যেই বিষয়টা সেটা হচ্ছে তুমি যখন ডাউনলোড দিয়ে নিজের মোবাইলের সেইভ করে নিচ্ছি, তুমি আসলে মূল ছবিটার একটা কপি সেইভ করতেসো। মূল ছবিটা না। মূল ছবিটার মালিক যে NFT টা কিনসে সে। আর এইভাবে এটাকে কপি করার মাধ্যমে তুমি আসলে এটার মূল্য বাড়ায় দিচ্ছো

সখিনা:- কেমনে?

আমি:- অ্যান্টিক ভ্যলুওয়ালা জিনিসপাতির যত কপি করা হয়, তার মূল্য তত বাড়ে। 

সখিনা:- ওওও। আর সে যে মূল মালিক, এটা বুঝে কেমনে?

আমি:- ওই যে, Token এর বিষয়টা

সখিনা:- আচ্ছা, যে কেউ কি যেকোন ডিজিটাল এসেট দিয়ে NFT বানাতে পারবে? মানে, একটা ডিজিটাল কিছু NFT হয় কিভাবে? ধর, একটা ছবি তুললাম আমি, তাহলে কি সেটা সাথে সাথে NFT হয়ে যাবে?

আমি:- না না, বিষয়টা এমন না। যখন তুমি কোন একটা ডিজিটাল এসেট এর উপর ব্লকচেইন টেকনোলজি ইমপ্লিমেন্ট করবা, তখনই সেটা NFT হবে। আর যেহেতু তুমি ইমপ্লিমেন্ট করসো, তার মানে সেই NFT এর মালিক তুমি। 

সখিনা:- তখন আমি সেই NFT নিজের ইচ্ছা মত দামে বিক্রি করতে পারবো

আমি:- হ্যাঁ, আবার চাইলে নিলামেও তুলতে পারবে।

সখিনা:- আচ্ছা, এই যে নিলামে তোলা বা বিক্রি করা, ব্লকচেইন ইমপ্লিমেন্ট করে কোন ডিজিটাল এসেটকে NFT বানানো, এইসব করে কোথায়?

আমি:- এইসবের জন্য বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়,  সবচেয়ে জনপ্রিয় আর NFT এর জন্য বানানো প্রথম মার্কেটপ্লেস হলো OpenSea, যেটা ২০১৭ সালে বানানো হয়। 

সখিনা:- এইগুলো যে বেচে, সেই ডলারগুলো কি ব্যাংক একাউন্ট দিয়ে দেয়?

আমি:- না না। ওইগুলোর দাম পরিশোধ করে ক্রিপ্টো ওয়ালেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে।


সখিনা:- যেহেতু, যে কেউ-ই যেকোন ডিজিটাল এসেটকে NFT বানায় ফেলতে পারে, তাহলে আমি তো চাইলে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া NFT টা ডাউনলোড করে আবার সেটাকে NFT বানায় কম দামে বিক্রি করে দিতে পারব। না?

আমি: পারবা। অবশ্যই পারবা। কিন্তু সেইক্ষেত্রে সেটা মূল মালিকের চোখে অবশ্যই পড়বে এবং তখন সে তোমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার ফলে তোমাকে অনেক বড় এমাউন্টের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ,  কোন মার্কেটপ্লেসে কেউ যখন কোন  NFT Mint করতে যায়, তখন তাকে একটা Tems & Condition এ সাইন করতে হয়। সেখানে এই বিষয়ে বিস্তারিত নিয়ম দেওয়া আছে। অতীতে এই ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটসে!

সখিনা:- Mint করা মানে কি?

আমি:- আরে, ডিজিটাল এসেটে ব্লকচেইন ইমপ্লিমেন্ট করার বিষয়টাকে Mint বলে।

সখিনা:- আচ্ছা ধরো, কোন একটা ফুটবল খেলার অনেক বড় একটা মূহূর্তের ছবি আমি গ্যালারিতে বসে তুলসি। এরপর আমি সেই ছবিটা NFT বানায় ফেললাম। বিক্রিও করে ফেললাম। তাহলে কি হবে?

আমি:- কি হবে? তুমি টাকা পাবা!

সখিনা:- না না, মানে তো ফিফা এই কাজটা করার আগে আমি করে ফেললাম। তাও অনুমতি না নিয়ে। ফিফা কিছু বলবে না? বা বলতে পারবে না? বা করতে পারবে না?

আমি:- কি বলবে? কিছু বলার নাই ওদের। 

সখিনা:- আর ওরা যদি সেইম NFT লঞ্চ করে। 

আমি:- ওই যে একটু আগে বললাম। মূল মালিক হিসেবে তুমি ফিফার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারবে।

সখিনা:- ওয়াও!!!! আচ্ছা, এই যে এত্তো মিলিয়ন ডলার খরচ করে NFT গুলো কিনতেসে, এইগুলো কিনে আসলে লাভ কি হয়? মানে ধর, আমি মোনালিসার আসল কপিটা কিনলাম, আমি সেটাকে আমার বাসার দেয়াল টাঙায় রেখে মানুষকে দেখাতে পারব। কিন্তু NFT এর ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন? আমি কি এটাকে মোবাইলের ভিতর থেকে দেখাবো?

আমি:- এই বিষয়টা যদি বুঝতে হয়, তাহলে আমাদের একটু ভবিষ্যৎ এ গিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমাদের বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি যেরকম আছে, ভবিষ্যৎ এ কিন্তু এরকম থাকবে। ২০২৭/২০২৮ সাল নাগাদ ধীরে ধীরে মেটাভার্স প্রযুক্তি আসা শুরু করবে। আমরা ধীরে ধীরে প্রবেশ করব Virtual Reality এর যুগে। তখন VR Googles এর মাধ্যমে একটা আলাদা দুনিয়া থাকবে। সেখানে ভার্চুয়াল ঘর-বাড়ি থাকবে। সেই ভার্চুয়াল ঘর-বাড়িতে এ্যান্টিক হিসেবে এই NFT গুলো সাজায় রাখার পাশাপাশি ভার্চুয়ালি মানুষজনদের দেখানোও যাবে।


সখিনা:- আচ্ছা প্রথম NFT কে বানাইসে?

আমি:- Kevin McCoy এবং  Anil Dash মিলে ২০১৪ সালের মে মাসে "Quantam" নামে পৃথিবীর প্রথম NFT বানায় যেটা ছিল Kevin McCoy এর বউ Jennifer এর বানানো একটা ভিডিও। McCoy এই NFT টা Namecoin Blockchain এ রেজিস্টার করার মাধ্যমে বানায় আর এইটা সে Anil Dash এর কাছে ৪ ডলারে বিক্রি করে দেয় New York এর New Meuseum এ Seven on Seven Conference এর জন্য লাইভ প্রেজেন্টেশন চলার সময়। ওরা এই জিনিসটাকে তখন নাম দিসিলো, "Monetized Graphs"

সখিনা:- এইসব পুরোটা তুমি মুখস্ত করে রাখসো?????

আমি:- আমার হাতে মোবাইল দেখেতেসো?

সখিনা:- আমিও তো ভাবি, তুমি এত্তো ট্যালেন্ট কেমনে হয় গেসো!!!!

আমি:- তুমি কি আমাকে অপমান করলা?

সখিনা:- কন্টুনি কর, কন্টুনি। 

আমি:- যাই হোক! ২০১৫ সালের অক্টোবরে লন্ডনে ইথেরিয়াম এর প্রথম ডেভেলপার কনফারেন্স DEVCON 1 এ প্রথম NFT প্রজেক্ট Etheria লঞ্চ করা হয়।

সখিনা:- NFT নামটা কেমনে আসছে?

আমি:- ২০১৭ সালের দিকে যখন Curio Cards, CyberPunks, rare Pepe এর মত সফল NFT প্রজেক্ট লঞ্চ হওয়া শুরু করে, তখন Ethereum Github এই NFT নামটার প্রস্তাব হয়। ERC-721 স্ট্যান্ডার্ডের বিস্তারের ফলে এই নামটার প্রসার বাড়ে।

সখিনা:- তো এইটা কি তখন থেকে এত্তো কোটি কোটি টাকা কখন থেকে কামানো শুরু করসে?

আমি:- ওই বছরই CryptoKitties নামে একটা অনলাইন গেম বিলাইয়ের NFT বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা কামায়। তখনই আসলে মানুষজনের কাছে এই NFT জিনিসটা পরিচিত পাওয়া শুরু করে। এই গ্রোথ এত বেশি ছিল যে ২০২০ সালে NFT এর ভ্যলু দাঁড়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ এর প্রথম তিন মাসে NFT মার্কেটে মোট ২০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে মানুষজন! সেই বছর Christie তে একটা বেশ বড় নিলাম বসে ডিজিটাল আর্টের NFT এর। সেখানে Pak এর Merge নামের ডিজিটাল আর্টের NFT ৯১.৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় যেটা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামী NFT। এর সাথে Mike Winkelmann যাকে মানুষজন Beeple নামে চিনে, ওর Everyday: the First 5000 Days নামের NFT ৬৯.৩ মিলিয়নে বিক্রি হয় যেটা ২য় সর্বোচ্চ দামী NFT। 

সখিনা:- উরি বাব্বা!! আচ্ছা NFT বানাতে কত টাকা লাগে?

আমি:- লাগে না কোন টাকা। ফ্রীতেই করা যায়!

সখিনা:- সত্যি? কেমনে করে????

আমি:- একটা Metamask ওয়ালেট বানাবা, এরপর সেটা দিয়ে OpenSea তে একাউন্ট বানাবো, এরপর সেখানে যে ডিজিটাল এসেটটার NFT বানাতে চাও সেটা সিলেক্ট করে দিবা, এরপর সেটাকে Solana দিয়ে Mint করে সেল করার জন্য লিস্ট করে দিবা/নিলামে তুলে দিবা। শ্যাস!!!!

সখিনা:- এত্তো সহজ! তাইলে আমি এখনই গিয়ে NFT বানায় লাখ-খানেক কামায় নিই। 

আমি:- এত্তো সহজ???? NFT বানানোর পর সেটাকে সেল করার জন্য সেটাকে ভালোভাবে মার্কেটিং করতে হয়। 

সখিনা:- মার্কেটিং কেমনে করে? কোথায় করে?

আমি:- NFT মার্কেটিং এর জন্য বেস্ট জায়গা হচ্ছে টুইটার। তারপর আসে, ইন্সটাগ্রাম। আর মার্কেটিং করার জন্য মার্কেটিং জানতেও হয়। অবশ্য মার্কেটিং করেও তেমন একটা লাভ নাই বললেই চলে।

সখিনা:- কেন? কেন?? কেন???

আমি:- কারণ, ২০২২ সালের মে মাসে The Wall Street Journal এর রিপোর্ট মতে, NFT মার্কেট "Collapse" করা শুরু করসে। ২০২১ এর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ, NFT Token এর দৈনিক সেল ৯২% পর্যন্ত ডিক্লাইন হয়। সেই মাসের নভেম্বর নাগাদ NFT মার্কেটে এক্টিভ ক্রিপ্টো ওয়ালেটের সংখ্যা ৮৮% কমে যায়। এই বছর মানে ২০২৩ সালের গত মাসে মানে সেপ্টেম্বরে dappGamble দাবি করে ৯৫% NFT চলে আসছে Zero Monetary Value তে। 

সখিনা:- হায় হায়!

আমি:- আরো একটা বিষয়, সেটা হচ্ছে একটা কন্ট্রোভার্সিয়াল সেলের কারণে ইতালির সরকার, বিভিন্ন জনপ্রিয় চিত্রকর্মকে NFT তে রূপান্তর এর উপর ব্যান ঘোষণা করে। Snopp Dogg এর মত যেসকল বড় বড় যেসকল সেলিব্রেটিরা NFT এর বড় ইনভেস্ট করসে, তারা বেশ বড় অংকের লস খাইসে। NFT বা NFT এর মার্কেট বর্তমানে ডেড বা ভ্যালু'লেস বললেই চলে।

সখিনা:- আহা! স্বপ্ন মাটিচাপা দিয়ে দিল!

আমি:- কীসের স্বপ্ন?

সখিনা:- আমার স্বপ্ন! NFT বেচে লাখোপত্নী হওয়ার!!

আমি:- লাখোপতি হবে ওইটা!

সখিনা:- "পতি" তো ছেলেরা হয়। আমি মেয়ে যেহেতু, আমি "লাখোপত্নী" হবো!

আমি:- আচ্ছা, তাহলে NFT রিলেটেড একটা মজার ঘটনা শোনায় তোমাকে।

সখিনা:- কি ঘটনা?

আমি:- ২০২১ সালে আমেরিকান ব্লকচেইন কোম্পানি Insenctive Protocol, ইংরেজী গ্র‍্যাফিটি আর্টিস্ট Banksy থেকে Morons নামে একটা অরিজিনাল স্ক্রিন প্রিন্ট কিনে ৯৫,০০০ হাজার ডলার দিয়ে। এরপর ওরা একটা ভিডিও বানায় যেখানে দেখা যায় সেই স্ক্রিন প্রিন্টটা কেউ সিগারেটের লাইটার দিয়ে পুড়িয়ে ছাই বানাই দিচ্ছে। এরপর ওই ভিডিটাকেই ওরা NFT তে কনভার্ট করে বেচে দেয়!

সখিনা:- এ্যাঁহ! ভালো আইডিয়া তো!! NFT তো চাইলে আমি এখনো বানাতে পারবো। না?

আমি:- হ্যাঁ!

সখিনা:- মার্কেট ফেইল হয়সে তো কি হয়সে? আমি এরকম ইউনিক আইডিয়া দিয়ে NFT বানায় সেটা সেল করে কোটিপতি হয়ে জামু। মুহাহাহাহাহা!!!!

আমি:- 😐


ভালো থাকবেন, ভালো রাখবেন। Bদায়

কলমে: তারুণ্য

logging out.........

Let's Connect:

Let's Connect:

Create a free website with Framer, the website builder loved by startups, designers and agencies.