James Webb Space Telescope

James Webb Space Telescope

Bangla

James Webb Space Telescope (Credit: Vox)
James Webb Space Telescope (Credit: Vox)
James Webb Space Telescope (Credit: Vox)

"I think the greatest promise of the James Webb Space Telescope is it will answer questions that none of us have imagined or thought to ask."

- Paul Geithner, Deputy Project Manager (Technical) of JWST


২৩ বছর! শুনতে যতটা ছোট মনে হয়, বাস্তবে তার থেকেও অনেকগুণ দীর্ঘ সময়। আর এই সম্পূর্ণ সময় একটা প্রজেক্টের পেছনে খরচ করা কোন যেনতেন কথা নয়। নিজের ক্যারিয়ারের একটা বৃহৎ সময় বা তর্কসাপেক্ষে প্রায় সম্পূর্ণ সময় খরচ করে অসংখ্য মানুষ একসঙ্গে যে পরিশ্রম দিয়েছেন, তারই ফলাফল হলো সম্প্রতি সময়ে সাড়া জাগানো "জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ"। তার সক্ষমতা বা সফলতা তো নিজের চোখেই দেখেছি। কিন্তু এই সফলতা আসার পেছনে যে দীর্ঘ ২৩ বছরের সাধনা ছিল, তার অধিকাংশ বা সম্পূর্ণ গল্পটাই আমাদের অজানা।


গল্প শুরু ১৯৯৬ সালে। নায়ক নাসা। ১৯৯৬ সালে নাসা এই টেলিস্কোপ বানানোর প্রজেক্টের প্রস্তাবনা দেয়। তবে, হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে তার থেকেও শক্তিশালী টেলিস্কোপ বানানোর আলোচনাটা শুরু হয় ৮০’র দশকে। তখন অবশ্য সেটা চায়ের আড্ডা পর্যান্তই সীমাবদ্ধ ছিল। ৯০ এর শুরুর দিকে এসে এই আলোচনা চায়ের কাপের আড্ডা থেকে পদোন্নতি পেয়ে গোল টেবিল বৈঠকের সিরিয়াস আলোচনায় চলে আসে।


১৯৯৬ সালে প্রজেক্ট প্রস্তাবনার সময়, নাসার সাথে ESA (European Space Association) এবং CSA (Canadian Space Association) কোলাবরেট করে। টেলিস্কপের কন্সট্রাকশান আর লঞ্চের কাজে ESA থাকবে এটা ESAএর মেম্বাররা ২০০৩ সালে মেনে নেয় আর ২০০৭ সালে নাসার সাথে ESA এর এই বিষয় নিয়ে চুক্তি হয়। চুক্তির শর্ত মোতাবেক, প্রজেক্টে সম্পূর্ণ পার্টনারশিপের বদলে ESA এই প্রজেক্টের জন্য NIRSpec instrument, the Optical Bench Assembly of the MIRI instrument, Ariane 5 ECA launcher, আর কর্মী দেবে। আর CSA এই প্রজেক্টের জন্য Fine Guidance Sensor, Near-Infrared Imager Slitless Spectrograph এবং কর্মী দেবে। ১৫ টা দেশের হাজার খানেকের উপর সায়েন্টিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার, আর টেকনিশিয়ান এই প্রজেক্টে কাজ করে। ২৫৮টা কোম্পানি, সরকারী এজেন্সি আর একাডেমিক ইন্সটিটিউশনের এর প্রি-লঞ্চ প্রজেক্টে যোগ দেয়। এছাড়া নাসার পার্টনার দেশগুলো এই প্রজেক্টের পোস্ট-লঞ্চ অপরেশনে যোগ দেয়। 


প্রজেক্ট তো প্রস্তাবনা পেল।বেশ সুখবর। এখন কাজ-কাম শুরু করা যাবে। কিন্তু তার আগে প্রজেক্টের একটা নাম তো দিতে হবে, নাকি? তাই প্রাথমিকভাবে প্রজেক্টের নাম দেওয়া হলো: “NEXUS precursor telescope mission”। কিন্তু এই নামটা আবার তাদের বেশিদিন পছন্দ হয় নাই। তাই ২০০২ সালে নাসার এডমিন  Sean O'Keefe এই নাম পালটায় নতুন নাম রাখেন, James E. Webb নামে এক নেতার নামে। না না, ইনি এলাকার নেতা না। ইনি ছিলেন ১৯৬১ থেকে ১৯৬৮ এই সময়ে নাসার নেতা। মানে সোজা কথায় এডমিন আরকি। সে সময় আবার নাসায় এপোলো প্রজেক্ট চলতেসিল। নাসাকে নাসা বানানোর পিছনে এই ব্যাক্তির আবার ইয়া লম্বা হাত ছিল। সেই আলোচনা অন্য একদিন হবে।


এখন তো সব রেডি। প্রজেক্ট লঞ্চ হয়সে, নাম দেওয়া হয়সে, কোলাবোরেটর পাওয়া গেসে, কর্মীও পাওয়া গেসে। এখন দরকার বানানো শুরু করা। তো যেই বলা সেই কাজ। প্রজেক্ট সাইন্টিস্ট John C. Mather আর নাসার Goddard Space Flight Center এই প্রজেক্ট বানানোর কাজ-কামের দায়িত্ব নিল। প্রাথমিকভাবে Northrop Grumman Aerospace Systems কন্ট্রাক্ট নিল Satellite bus, Sunshield, Deployable Tower Assembly (DTA), Mid Boom Assembly (MBA) বানানোর। সাথে সাব-কন্ট্রাক্ট নিল  Ball Aerospace & Technologies; যাদের কাজ ছিল Integrated Science Instrument Module (ISIM) বানানো। 


এখন ভাই ধরেন, আপনি আমি মানুষ হয়ে আমাদের ছোটবেলায় পরীক্ষার হাত থেকে বাঁচতে পারি নাই আর এই বেচারা তো টেলিস্কোপ। এরে কি আর ছাড়ে? তারও ভাই অনেকগুলোও পরিক্ষা দিতে হয়সে। এই প্রজেক্ট ২০০৮ সালের মার্চে Preliminary Design Review (PDR), এপ্রিলে Non-Advocate Review, ২০০৯ সালের মার্চে Integrated Science Instrument Module review, অক্টোবরে Optical Telescope Element review, ২০১০ সালের জানুয়ারীতে Sunshield review আর এপ্রিলে Mission Critical Design Review (MCDR) পাস করে।


সকল পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে ২০১৫ সালের নভেম্বরে ষড়ভুজাকৃতির প্রাথমিক আয়নাগুলো নিয়ে কাজ শুরু হয় আর ২০১৬ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ হয়। আর ৩রা মার্চ শেষ হয় সেকেন্ডারি আয়নার কাজ। ওই বছর নভেম্বরে যাবতীয় কন্সট্রাকশনের কাজ শেষ হয়। এরপর টেস্টিং এর কাজ শুরু হয়। সেই টেস্টিং এর দরুণ প্রায় ৩৪৪টি ত্রুটি ধরা পরে। আর সেই ত্রুটি সংশোধনের জন্য নাসা প্রজেক্টের লঞ্চ ডেট প্রায় ২ বছর পিছিয়ে মে ২০২০ এ নিয়ে যায়।


অবশেষে NASA, CSA ও ESA এর যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত এই টেলিস্কোপ ২০২১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলে বিষুবরেখার কাছে গায়ানার কুরু শহরে অবস্থিত গায়ানা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে আরিয়ানেস্পাসের তত্ত্বাবধানে আরিয়ান ৫ রকেটের মাধ্যমে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। আর তার সাফল্যের চিত্রে আমাদের তো নিউজফিডে ঘুরে ফিরে আসছেই।


বিগ ব্যাঙেরও আগের সময়ের আলো দেখা, গ্যালিক্স আর তারাদের ফরমেশন নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা করা এবং দূরবর্তী গ্রহসমূহের মধ্যে প্রাণের অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে নিয়ে লঞ্চ করা এই প্রজেক্টের মোট খরচের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয় টেলিস্কোপের ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টে। ৮৬২ মিলিয়ন ডলার ৫ বছর পর্যন্ত প্রজেক্টের কাজ সাপোর্ট করার জন্য খরচ করার পরিকল্পনা করা হয়। ESA ৭০০ মিলিয়ন ইউরো এবং CSA ২০০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার দেওয়ার মাধ্যমে প্রজেক্টে অবদান রাখা শুরু করে। 


দীর্ঘ ২৩ বছরের এই বিলিয়ন ডলারের এই প্রজেক্টের পিছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের পরিশ্রম। এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য বার প্রজেক্ট বন্ধ করে দেওয়ার মত বাধার সম্মুখীন হয়েছে নাসা। কিন্তু তারা বিভিন্ন রিপ্ল্যানিং করা আর বাজেট কম্প্রমাইজ করার মাধ্যমে এই প্রজেক্ট চালু রেখেছে। বাংলা প্রবাদ, “সবুরে মেওয়া ফলে” এবং “পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি” এর সবচেয়ে সেরা উদাহরণ মনে হয় নাসা এবং এর প্রজেক্ট।


এই ছিল শতাব্দীর অন্যতম চমকপ্রদ টেলিস্কোপ “জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ” এর নির্মাণের পিছনের গল্প।


Bদায়

কলমে:- তারুণ্য

Let's Connect:

Let's Connect:

Create a free website with Framer, the website builder loved by startups, designers and agencies.